একটি ছাতা কিংবা বর্ষণমুখর দিন : মৌলী আখন্দ এর নতুন উপন্যাসিকা!

একটি ছাতা কিংবা বর্ষণমুখর দিন : মৌলী আখন্দ এর নতুন উপন্যাসিকা!

একটি ছাতা কিংবা বর্ষণমুখর দিন | মৌলী আখন্দ | রিভিউ: সালসাবিলা নকি

প্রকৃতিতে বসন্ত আসে প্রেমের বার্তা নিয়ে। মানুষের মনে প্রেম আর ভালোবাসার অনুভূতি নিহিত সৃষ্টির শুরু থেকেই। প্রতিটি মানুষই তার মনে ধারণ করে থাকে অসীম প্রেম। সে প্রেম হতে পারে বিপরীত লিঙ্গের কোনো মানুষের জন্য কিংবা বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি এমনকি যেকোনো ফুল-পাখি-গাছগাছালি, পোষা প্রাণীর জন্য। তবে সব কিছুর চাইতেও হৃদয়কে বেশি আলোড়িত করে জীবনের প্রথম প্রেম যা সাধারণরত বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষ অনুভব করে থাকে। এ সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মৌলী আখন্দের নতুন উপন্যাসিকা ‘একটি ছাতা কিংবা বর্ষণমুখর দিন’ এমনই একটি প্রথম প্রেমের গল্প।

#আরও পড়ুন: একা | মৌলী আখন্দ | রিভিউ: সালসাবিলা নকি

কাহিনি সংক্ষেপ:

গল্পের শুরুটা নীতুকে দিয়ে। চেনা-পরিচিত শহর, বাবা-মা সবাইকে ছেড়ে মেডিকেল হোস্টেলে এসে থাকতে হয় নীতুর। প্রথম প্রথম নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষজনের ভিড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে স্বাভাবিকভাবেই কষ্ট হয় তার। কিন্তু ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিকও হয়। ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের দিনই পরিচয় হয় সাকিবের সাথে। এবং প্রথম সাক্ষাতের দিন থেকেই সাকিবকে অসহ্যকর ও লেইম পারসন মনে হয় নীতুর। দিন যায়, ধীরে ধীরে বিরক্তিকর সাকিব ও আঁতেল নীতুর মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। সাকিবকে পড়া দেখিয়ে দেয় নীতু। নীতুর হেল্প ছাড়া সাকিব অসহায়। এরপর সাকিব-নীতু সেকেন্ড ইয়ারে ওঠে। কলেজে আসে নবীন শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে প্রিয়তি নামের একজনকে ভালো লেগে যায় সাকিবের। পড়াশোনায় যেমন নীতুর হেল্প ছাড়া সাকিবের চলে না তেমনই প্রেমে পড়ার পরই প্রিয়তিকে পটানোর জন্য সে নীতুর হেল্প চায়? এরপর কী হয়? নীতু কি সাকিবকে হেল্প করে? সাকিব আর প্রিয়তির প্রেম কি হয় শেষ পর্যন্ত? নীতুর নিয়তিতেই বা কী আছে? বন্ধুত্ব, অভিমান, খুনসুটি, ঈর্ষা, প্রথম প্রেমের অনুভূতি এসব নিয়েই ‘একটি ছাতা কিংবা একটি বর্ষণমুখর দিন’ উপন্যাসিকাটি।

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

মৌলী আখন্দ সাধারণত প্রেমের গল্প লেখেন না। সামাজিক প্রেক্ষাপটে রচিত গল্পগুলোতে থাকে বহুদিন ধরে চলে আসা অন্যায়, অজ্ঞানতা, কুসংস্কার। থাকে হারতে হারতে জিতে যাওয়ার গল্প। সামাজিক গল্প ছাড়াও ভৌতিক গল্পও তিনি লিখেছেন। আর সেসব গল্পও হয় আলো ও অন্ধকারের মাঝে দ্বন্দ্ব নিয়ে, অন্ধকারকে হারিয়ে আলোর জিতে যাওয়ার গল্প। তার পূর্ব প্রকাশিত গল্পগুলোর চাইতে ‘একটি ছাতা কিংবা একটি বর্ষণমুখর দিন’ উপন্যাসিকাটি ভিন্ন এ কারণেই, কারণ এটি নিঁখাদ প্রেমের গল্প। আর এ গল্পটির শুরুতেই ভূমিকাতে তিনি সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ হিসেবে লিখে রেখেছেন, তার এই গল্প পড়ে যেন কেউ অনুপ্রাণিত হয়ে প্রেমে না পড়ে। প্রেমে পড়ার আগে নিজেকে (বিশেষ করে মেয়েদের) গড়ে তুলতে হবে। নিজের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার সব বিসর্জন দিয়ে যেন কেউ প্রেমে না পড়ে। প্রেম যেন নাহয় ধ্বংসের কারণ।

#আরও পড়ুন: HSC Short Syllabus 2024 PDF Download

যাইহোক এবার আসি গল্পটি আমার কেমন লেগেছে। আগেই বলেছি এটি নিঁখাদ প্রেমের গল্প। প্রেমের আগে অবশ্য বন্ধুত্বই প্রাধান্য পেয়েছে। আমার মনে হয় যারা প্রেমে পড়ার বয়সটা পার করে এসেছেন তারাও এই গল্প পড়ে নিজেদের অতীতে অর্থাৎ প্রথম প্রেমে পড়ার দিনগুলোতে ফিরে যাবেন। সাকিবের লেট করে ক্লাসে যাওয়া, সাকিবের জন্য নীতুর স্যারের কাছ থেকে বকা খাওয়া, নীতুর জন্য সাকিবের বকা শোনা, ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, ফটোকপির ফাঁকে চিরকুট এসব পড়ে নিজের স্টুডেন্ট লাইফের কথা মনে পড়বে না এমন মানুষ খুব কমই হয়তো পাওয়া যাবে। মৌলী আখন্দের লেখা বরাবরের মতোই সহজ-সাবলিল। তার লেখনশৈলী, ঘটনা প্রবাহের দক্ষতার কারণেই বইটি একটানে পড়ে শেষ করা যায়। কিন্তু শেষ করার পরও কেমন শূন্য শূন্য অনুভব হয়। মনে হয়, এখানেই কেন শেষ হলো। এই প্রেম পরিণয়ে রূপ নিলো কিনা জানার আগ্রহ জাগে মনে।

বইয়ের প্রচ্ছদ বেশ দৃষ্টিনন্দন। দেখে মনে হয় প্রচ্ছদের অংশ হয়ে যাই। ছাতাটা কুড়িয়ে নিই কিংবা ছাতাটা পড়ে থাক, প্রিয় মানুষটির সাথে বৃষ্টিতে ভিজি। বইয়ের বাইন্ডিংও বেশ ভালো। লেখকের উৎসর্গ মন ছুঁয়ে গেছে।

লেখিকা এই উপন্যাসিকাটি এমনভাবে লিখেছেন, যারা প্রেমের উপন্যাস পছন্দ করেন আবার যারা আমার মতো প্রেমের উপন্যাস পছন্দ করেন না সবারই ভালো লাগবে।

#আরও পড়ুন: নাটাই ঘুড়ি | মৌলী আখন্দ | রিভিউ: সালসাবিলা নকি

এক নজরে: একটি ছাতা কিংবা বর্ষণমুখর দিন

বইয়ের নাম: একটি ছাতা কিংবা বর্ষণমুখর দিন

লেখক: মৌলী আখন্দ

ধরন: রোমান্টিক উপন্যাসিকা

প্রচ্ছদকার: সারাজাত সৌম

মলাট মূল্য: ৪০০ ৳

প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৩

প্রকাশনী: আজব প্রকাশ

প্রাপ্তিস্থান: অমর একুশে বইমেলা ২০২৩, স্টল নাম্বার ১০-১১। এছাড়া অনলাইনে সব বুকশপেই পাওয়া যাচ্ছে।

রিভিউ লিখেছেন: সালসাবিলা নকি

লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন: