এটা কোনো আস্ত বইয়ের রিভিউ নয়, শুধুমাত্র একটা ছোটোগল্পের ছোট্ট পাঠ-প্রতিক্রিয়া বলা যায়। ঠিক সুচারু কিংবা দক্ষ হাতে লেখা কোনো পাঠ প্রতিক্রিয়াও বলা যাবে না, আনাড়ি হাতের কিছু অতীত অনুভূতির গল্প বলাই শ্রেয়। তবুও লিখছি। কারণ, ‘আমরা তিনজন‘ গল্পটার সাথে আমার অনেক অদ্ভুত আবেগ অনুভূতি জড়িত! গল্পটা প্রথম পড়ি ক্লাস নাইনে পড়ার সময়।
আজ থেকে আট বছর আগে। তখন আমি স্কুলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য ছিলাম। নিয়মিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়তাম! স্কুলের নিয়ম ছিল- একটা বই বাসায় নিয়ে গিয়ে এক সপ্তাহ রাখা যাবে পড়ার জন্য!
তো, একদিন হঠাৎ ‘বাংলাসাহিত্যের নির্বাচিত ছোটগল্প (প্রথম খণ্ড)’ বইটা হাতে আসে, বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বইটা নিয়ে নিই। ওই বইটাতে অন্যান্য লেখকের আরও কয়েকটা গল্পের সাথে এই গল্পটাও ছিল। আমিসহ আমার আরও দুই বন্ধু [সম্ভবত শুভ্র আর সুষ্ময়] বাসায় যাবার জন্য অপেক্ষা না করে, ক্লাসের ফাঁকেই বইটা পড়া শুরু করে দিই।
এই গল্পটা শুরু করার পর, শেষ না করা অব্দি আর থামতে পারছিলাম না! কেমন যেন এক নিশ্বাসে, গ্রোগ্রাসে গিলে ফেললাম গল্পটা। পড়ার পর তিনজনই তব্দা খেয়ে রইলাম অনেক্ষণ। ড্রাই-আইস রোগে ভুগা, কৈশোর আর যৌবনের মাঝামাঝি সময়ে (যাকে বয়ঃসন্ধি বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়) আটকে থাকা- আমার চোখ দিয়ে জীবনে প্রথমবার কোনো বই পড়ে, কোনো গল্প পড়ে চোখে জল এলো। কোনোভাবে ক্লাসের সবার চোখ থেকে আমার চোখের জল লুকিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার ভেতরে যে তোলাপাড় চলছিল, সেটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক থাকতে দিচ্ছিল না!
সেদিনই আমি আবিষ্কার করেছিলাম- কথাসাহিত্য কতটা শক্তিশালী হতে পারে! একটা লেখা কতটা শক্তিশালী হলে আমার মতো মানুষের চোখে জল আনতে পারে! একজন লেখক কী প্রখর লেখনশৈলী দিয়ে কারও ভেতরকার অনুভূতিকে এতটা নাড়িয়ে দিতে পারে!
এই গল্পটা হয়তো বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বিখ্যাত কিংবা অত্যাধিক জনপ্রিয় কোনো গল্প না। কিন্তু ক্লাস নাইনে পড়া অবধি এটাই ছিল আমার পড়া সবচেয়ে অনবদ্য গল্প। এরপর কতশত বই পড়েছি, বিখ্যাত বিখ্যাত গল্প উপন্যাস পড়েছি; এই গল্পের মতো আর কোনোটা মনের মধ্যে অতটা দাগ কাটতে পারেনি।
এই গল্পের প্রতিটা চরিত্র আমার খুব চেনা, খুব পরিচিত; যেন অনন্তকাল পাশাপাশি ছিলাম আমরা, একসাথে পথ হেঁটেছি অনেকগুলো দিন। আমার পঞ্চাশেরও অধিকবার পড়া একমাত্র গল্প এটি। এমনকি আমার প্রিয় মানুষটাকে আমি এখনো ‘তরু’ নামে ডাকি, এই ‘তরু’ নামটা এই গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম!
গল্পটা হয়তো আরও অনেকের ভালো লেগেছে, কিংবা লাগেনি। সবার আমার মতো উদ্ভট লেভেলের ভালো লাগবে এমনটাও না। তবে যারা এখনো পর্যন্ত গল্পটা একবারও পড়েননি পড়ে দেখতে পারেন!
গল্পটা গল্পীয়ান সাইটে পড়তে ক্লিক করুন: আমরা তিনজন | বুদ্ধদেব বসু
আর যারা বইয়ের পাতার ঘ্রাণ নিতে ভালোবাসেন, বইয়ের পেলব পাতায় কালো কালো ছাপার অক্ষরে চোখ বুলিয়ে গল্প পড়তে পছন্দ করেন; আপনারা নিচের ছবিতে থাকা বই দুটির যেকোনো একটি সংগ্রহ করতে পারেন!
ভালো থাকুক আমার প্রিয় গল্প আর তার চরিত্ররা; বইয়ের পেলব পাতার ভাঁজে।