নাটাই ঘুড়ি | মৌলী আখন্দ | প্রিভিউ: সালসাবিলা নকি
”আমি ভীষণ ছন্নছাড়া মানুষ
ছাড়া পেলেই আকাশ জুড়ে উড়ি,
দিনের শেষে আবার ফিরে আসি
নাটাই যেমন আটকে রাখে ঘুড়ি।”
প্রকৃতি মাঝেমাঝে এরকম কিছু কিছু বিভ্রান্তিকর দৃশ্য তৈরি করে, যেন মানুষ সুতো কেটে উড়ে যাওয়ার কথা কখনো না ভাবে। যত দূরেই যাক না কেন, দিন শেষে যেন ফিরে আসে ভালোবাসার মায়াবী সুতোয় জড়িয়ে রাখা সংসারের নাটাইয়ে।
#আরও পড়ুন: একা | মৌলী আখন্দ | রিভিউ: সালসাবিলা নকি
হ্যাঁ সংসারকে যদি নাটাই হিসেবে কল্পনা করি তাহলে মানুষ সেই নাটাইয়ের ঘুড়ি। মানুষ উড়তে শুরু করে, ভাসতে শুরু করে কিন্তু একসময় ঠিকই নাটাইয়ের কাছে ফিরে আসতে হয়, ভালোবাসার টানে, মায়ার টানে। অবশ্য কিছু কিছু ঘুড়ির আর ফেরা হয় না। তারা ভালোবাসা ও মায়া নামক সুতোর টানকে উপেক্ষা করে, সুতো ছিঁড়ে উড়ে যায় বহুদূরে।
সমসাময়িক পাঠকনন্দিত লেখক ও ঔপন্যাসিক মৌলী আখন্দের নতুন উপন্যাস ‘নাটাই ঘুড়ি’র বিষয়বস্তু মোটামুটি এরকমই। কাহিনির শুরু হয় মীরাকে দিয়ে যে এক যৌথ পরিবারের সদস্য। এই পরিবারটি বাস করে ‘আমেনা মঞ্জিল’ নামক এক পুরোনো দোতলা বিল্ডিংয়ে। মীরা এতটাই চঞ্চল ও দুষ্টু তার দুষ্টুমির কারণেই একে একে উন্মোচিত হতে থাকে এই পরিবারটির সাথে সম্পর্কিত অজানা নানা রহস্য। পড়তে পড়তে পাঠক ভ্রুজোড়া কুঁচকে ফেলবেন, কী সেই রহস্য?
মীরার চাচাতো বোন নীরাকে ভালোবাসে শিহাব, সেই ছোটোবেলা থেকেই। কিন্তু নীরাও কি ভালোবাসে শিহাবকে? নাকি এই ভালোবাসা একপাক্ষিক? পরিণতি কী হয় এই ভালোবাসার?
এই উপন্যাসে আরও আছে মুশফিক, রিম্মি, মীরার ছোটো চাচা ইমরুল, ফুফি নাঈমা, তিথি, রূম্পাসহ আরও অনেকে।
#আরও পড়ুন: শিহানুল ইসলামের উপন্যাসিকা ‘দ্রোহের দিনগুলোতে’ | রিভিউ: ইসরাত জাহান জান্নাত
অনেকগুলো চরিত্রের বিশাল কলেবরের এই উপন্যাসটি প্রতি পৃষ্ঠায় পাঠককে ধরে রাখে একের পর জিজ্ঞাসা দিয়ে। আমাদের চেনা পরিচিত সব চরিত্রগুলোই উপন্যাসের পাতায় উঠে এসেছে। তাদের প্রত্যেকের সাথে পাঠকের তৈরি হবে অদেখা সম্পর্ক। এই সম্পর্কের টানেই পাঠক জানতে চাইবেন কী হবে ইমরুল আর তিথীর ভালোবাসার পরিণতি, নাঈমা কেন বিয়ে করতে চান না। নীরা, মীরা, মুশফিক, রিম্মি, রূম্পা এরা কি পারে এদের গন্তব্যে পৌঁছাতে?
এ সব প্রশ্নের উত্তর জানতেই পাঠক উল্টে যাবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। সব প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে ‘নাটাই ঘুড়ি’ নামক সামাজিক উপন্যাসটিতে!
মৌলী আখন্দ ইতিমধ্যেই পাঠকমনে শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন। সহজ-সাবলিল ভাষায় মানুষের চেনা-পরিচিত গল্পগুলোই তিনি তুলে আনেন। এই গল্পগুলো কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়, কখনো তীব্র ক্ষোভ ও অভিমানের সৃষ্টি করে। ‘নাটাই ঘুড়ি’ও এর ব্যতিক্রম নয়। আশাকরি, সুখপাঠ্য এই উপন্যাসটিও পাঠকের মনে স্থান করে নেবে।
#আরও পড়ুন: স্বপ্ন কেনার দামে | রুকসাত জাহান | প্রিভিউ: সালসাবিলা নকি
এ উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি:
‘‘নিজের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার অর্থহীন চেষ্টা নিরন্তর করে যায় মানুষ। যদিও দিন শেষে আবার নিজের বৃত্তেই ঘুরপাক খায়, তাতেই স্বস্তি বোধ করে। পুরোনো সবকিছুর মায়ার টানে আটকে যায়। দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা পুরোনো ক্যালেন্ডারটাও ফেলে দিতে ইচ্ছে করে না।’’
‘‘সঠিক সময়ে যে গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে পারে না, তাদের নাম পৃথিবীর সফল মানুষদের তালিকায় কখনো থাকে না। কোনো হিসেবেই তারা জেতে না। হেরে যাওয়া মানুষদের জন্য ইতিহাস কোনো জায়গা রাখে না।’’
‘‘বাধা পাওয়ার পরও যে পথ চলা থামিয়ে দেয় না, প্রকৃতি চলার পথে তাদের জন্য চমক সাজিয়ে রাখে। অন্য কোনো না কোনো দিক দিয়ে ভরিয়ে দেয় তাদের অপূর্ণতা। বাধা পাওয়ার পরেও থেমে না গিয়ে চলার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা, থেমে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া।’’
‘‘মানুষের মন বড়ো রহস্যময়, ভুলে যাওয়া ভালোবাসাকেও সে খুব যত্ন করে ঠাই দিয়ে রাখে মনের কোনো অচিন কুঠুরিতে।’’
এক নজরে: নাটাই ঘুড়ি
বইয়ের নাম: নাটাই ঘুড়ি
লেখক: মৌলী আখন্দ
ধরন: সামাজিক ও রোমান্টিক
প্রচ্ছদকার: রুদ্র কায়সার
মলাট মূল্য: ৫০০ ৳
প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৩
প্রকাশনী: তাম্রলিপি
প্রাপ্তিস্থান: অমর একুশে বইমেলা ২০২৩, তাম্রলিপির প্যাভিলিয়ন। এছাড়া অনলাইনে সব বুকশপেই পাওয়া যাচ্ছে।
প্রিভিউ লিখেছেন: সালসাবিলা নকি