হতাশা মুক্তির উপায় বই পড়া! | আবুল হাসনাত বাঁধন
আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, হতাশা থেকে মুক্তির উপায় কী? আমি উত্তর দিই- ব্যক্তিগত হতাশা থেকে মুক্তির একটা উপায় হচ্ছে বই পড়া। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন, বই পড়া-ই! দুঃখ কষ্ট ভোলার জন্য নন ফিকশন বই পড়ুন এবং অবশ্যই সেটা ট্রাজেডিধর্মী। ফিকশন বইগুলো সবটুকুই লেখকের কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু প্রত্যেকটা নন ফিকশন বইয়ের কাহিনি কারও না কারও জীবনের গল্প। নন-ফিকশনের লেখক জীবন থেকে, আশেপাশের মানুষ থেকে, সবকিছু থেকেই তার লেখার রসদ সংগ্রহ করেন। নন-ফিকশন বইয়ের গল্পের চরিত্রগুলো তাই বাস্তব। জীবনে কোনো না কোনো এক সময় এদের দেখা আপনি পাবেনই।
আমি যখন জীবনে বন্ধুর পথে চলতে চলতে হাঁপিয়ে ওঠি, দুঃখ এসে দলা পাকায় গলার মধ্যে, অতীতের ব্যর্থতা আর ভবিষ্যতের শংকায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে যাই; তখনই একটা ভালো বই নিয়ে বুঁদ হই। গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাস। পড়া শেষ হয়, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি, ‘এই তো বেশ ভালোই আছি। প্রভু, তোমাকে ধন্যবাদ এই সুন্দর পৃথিবীর জন্য।’ ব্যস, নতুন উদ্দ্যমে আবার শুরু হয় আমার পথচলা। নিরন্তর এগিয়ে চলার গল্প। আমাদের জীবনের অনেক বাঁক থাকে, কিন্তু তাই বলে জীবন কারও জন্যে থেমে থাকে না।
⏩ আরও পড়ুন: অষ্টাদশী পতিতা ও একটি নষ্ট গল্প | আবুল হাসনাত বাঁধন
আমাদের দুনিয়া ঘুরে ঘুরে সবার জীবনকে দেখার সময় ও সুযোগ হয় না। কাজটা লেখকরা তাদের লেখনী দিয়ে করে দেয় আমাদের জন্য। বই পড়ে আমরা পৃথিবীর নানা প্রান্তের অসংখ্য জীবনধারা সম্পর্কে অবগত হই। যারা পড়ুয়া তারা বুঝবেন, বই পড়ার মতো শ্রেষ্ঠ মেডিটেশন জীবনে আর নেই। আপনি যখন একটা বইয়ে গভীরভাবে ঢুকে যাবেন, সে সময় দুনিয়া উলটে গেলেও আর খবর হবে না আপনার। পড়ার সময় আমরা বইয়ের কাহিনিতে মিশে যাই। দেখি যে, ঘটনাগুলো আমাদের চোখের সামনেই ঘটে চলেছে। চরিত্রগুলো আমাদের আশেপাশে ঘুরোঘুরি করছে। আমরা চাইলেই তাদের সাথে মিশতে পারি।
একটা ভালো বই আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনধারা সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে। ডিপ্রেশনের সময় ট্রাজেডিধর্মী বই পড়লে, আপনি সান্ত্বনা পাবেন পৃথিবীতে আপনার চেয়েও দুঃখী মানুষ হয়তো কেউ না কেউ আছে। আপনি প্রেমিকার কাছে প্রতারিত হয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন, হতাশায় মরে যেতে চাচ্ছেন? ওইদিকে তাকিয়ে দেখুন বাঁচার জন্য তীব্র আকুতি। জীবনকে বুঝতে হলে রবীন্দ্রনাথ পড়ুন। গল্পগুচ্ছে ডুব মারুন। শেষে দেখবেন আপনি অনেকটা বদলে গেছেন। মরার ইচ্ছেটা আর নেই। আরও কয়দিন বেশি বাঁচতে ইচ্ছে করছে পৃথিবীতে।
বই পড়ুয়াদের জাগতিক কোনো হতাশাই গ্রাস করতে পারে না। কোনো আচমকা ঝড়ে ভেঙে পড়ার পর তারা আবার উঠে দাঁড়ায়। তাই নৈরাশ্যবাদীরা বই পড়ুন বেশি বেশি করে। যারা একেবারেই পড়তেন না তারা আজ থেকে, এই লেখা পড়ে শেষ করার পরপরই শুরু করে দিন।
⏩ আরও পড়ুন: আমি ও বই : আত্মিক প্রেম | আবুল হাসনাত বাঁধন
আশা করি আপনারা সবাই ব্যক্তিগত হতাশা থেকে মুক্তির চমৎকার একটা আইডিয়া পেয়েছেন। এখন থেকে নিয়মিত বই পড়বেন আর হতাশামুক্ত আলোকিত মানুষ হবেন!
লেখাটি ভালো লাগলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এ ধরনের আরও লেখা পড়তে গল্পীয়ানে চোখ রাখুন।
লেখা: আবুল হাসনাত বাঁধন