দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
তৃতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
চতুর্থ পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
পঞ্চম পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
ষষ্ঠ পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
সপ্তম পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
অষ্টম পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
নবম পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
দশম পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
এগারো পর্ব পড়তে ক্লিক দিন:
দেখতে দেখতে ছয়টা দিন পেরিয়ে গেল। কাল থানায় যেতে হবে। এসআই জলিল সাহেব বলেছিলেন, মোমেনার কাছ থেকে কী কী প্রত্যাশা করে সেগুলো লিখে নিয়ে যেতে। বাদল বুঝতে পারছে না কী লিখবে। সে মোমেনার কাছ থেকে আর কিছুই প্রত্যাশা করে না।
দুটো মানুষকে পাশাপাশি দাঁড় করালে তখন এমনিতেই তুলনা সৃষ্টি হয়, একজনের ত্রুটি ভেসে ওঠে, অন্যজনের গুণ। বিয়ের পর থেকে মোমেনার নারীসুলভ কোনো গুণ বাদলের চোখে কখনোই পড়েনি। সেখানে এখন কোহিনূরের আচরণ যেন আঙুল তুলে মোমেনার দোষগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে।
মোমেনার কারণে বাদলের বিষিয়ে উঠা মনে কোহিনূরের প্রতি মায়া জন্মে, সেটা প্রতি মুহূর্তে একটু একটু বাড়ছেই। নিজের এই অনুভূতিতে নিজেই অসহায়বোধ করছে সে। কার কাছে যাবে, কাকে বোঝাবে, মনের সব কথা বলে হালকা হবে; এমন কেউ কি নেই?
এরমধ্যে এক কাণ্ড হয়েছে। লিজা গ্রামে এসেছিল গতকাল। স্কুল ছুটির পর ভাইবোনদের নিয়ে গেছে তাদের ঘরে। এদিকে সময় মতো বাচ্চারা ঘরে না ফেরায় কোহিনূর অস্থির হয়ে যায়। বাদল স্বাভাবিকভাবে বলে, ‘এত টেনশন করনের কিছু নাই। এখানে সবাই সবার পরিচিত। আমি গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসি।’
কথাটা বলার পরও কোহিনূরের মুখটা অন্ধকার হয়ে থাকে। বাদল ভাবে, মা না হয়েও অল্প কয়দিনে বাচ্চাদের জন্য যে মমত্ববোধ তৈরি হয়েছে কোহিনূরের, সেটা কি মা হয়েও মোমেনার আছে? এই যে এতদিন শহরে ভাইয়ের বাসায় আছে, বাচ্চাদের একটা খবরও নেয়নি। বাদল জানে মোমেনা তাকে না জানিয়ে একটা মোবাইল কিনেছে। নিজের সেই মোবাইল থেকে না হোক ভাইয়ের মোবাইল থেকে তো অন্তত ফোন করে বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে পারতো। কেমন মা সে!
একটু খোঁজাখুঁজি করে বাদল আবিষ্কার করে বাচ্চারা মোমেনার বাড়িতেই আছে। সে ভেবেছিল হয়তো মোমেনা ফিরেছে, বাচ্চাদের দেখতে ইচ্ছে করছে বলে। ঘরে ঢুকে দেখে মোমেনা নয় লিজা। ভাইবোনদের নিয়ে গল্প করছে। সবাই কত হাসিখুশি! ওদের একসাথে দেখে বাদল কয়েক মিনিটের জন্য সব ভুলে গেল। তার সন্তান! সবাই একসাথে! পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর দৃশ্য বোধহয় এটাই, ভাইবোনদের খুনশুটি।
বাদলকে দেখে লিজা হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেল। রিংকি, পিংকি দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে। রিংকি বলছে, ‘বড়পা আসছে বাবা। আমরা সবাই এখন একসাথে থাকব। খুব মজা হবে। তুমি ছোটোমাকেও এখানে নিয়ে আসো।’
কথাটা শুনে লিজা ঝট করে মুখ তুলে তাকায়। ওর চোখে রাগ আর ঘৃণার সংমিশ্রণ বাদলের নজর এড়াতে পারে না। বাদল রিংকি পিংকিকে সরিয়ে লিজার দিকে এগিয়ে যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ক্যামন আছো আম্মু?’
লিজা ঠোঁট বাকিয়ে একটু সরে দাঁড়ায়। বাদল বুঝতে পারে লিজা এখনো রেগে আছে। সেদিন সে যা করেছে সেটা গুরুতর অন্যায় হয়েছে। তার উচিত ছিল লিজাকে বাসায় নিয়ে গিয়ে আদর করে বোঝানো। কিন্তু সেটা না করে মেরেছে। এর ফলে যা ক্ষতি হয়ে গেছে এখন তার ভরপায় কী দিয়ে করবে বাদল?
হঠাৎ ঝুম বৃষ্টির মতো চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল বাদলের। মেয়েকে টেনে ওর মাথাটা বুকে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘আমাকে মাফ করে দে মা। আমি মানুষ না, জানোয়ার। নিজের মেয়েকে কেউ এভাবে মারে না। তুই আমাকে যেই শাস্তি দিবি দে। তবু একটু কথা বল মা। একটু কথা বল আমার সাথে।’
লিজা বাবার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। বাবার কান্না দেখে তার একটুও খারাপ লাগছে না। সে জানে লোকটা নাটক করছে। আসার সময় মা পইপই করে সাবধান করে দিয়েছে। ‘তোর বাপ অনেক নাটক জানে। নাটক করেই আমারে বিয়া করসে। চেহারা দেখে যত নিষ্পাপ মনে হইব হউক, কিন্তু সে আসলে একটা শয়তান। এইটা মনে রাখবি। যা বলবে বলুক, কানে নিবি না।’
লিজা তাই তার কান বন্ধ রেখেছে। বাবার কথা কিচ্ছু কানে নিচ্ছে না। কিন্তু লোকটার চোখের পানি দেখে মনটা নরম হয়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে শক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সে সময় লিজার নানি খদিজা বেগম ঢুকল ঘরে। তার বাড়িটা এই বাড়ির সামনাসামনি। মাঝখানে শুধু দুই বাড়ির দুই উঠোনের দূরত্ব। খদিজা বেগম গমগমে গলায় বললেন, ‘তুমি এইহানে ক্যান আইছো? শনিবারে থানায় ফয়সালা হইব তো, এর আগ পর্যন্ত এইখানে আর আইবা না। পোলা-মাইয়ার লগেও কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবা না।’
‘এইটা কী বললেন আম্মা? এইটা আমার বাড়ি। এতদিন আমি আসি নাই, কারণ নিজের ঘরের তালা নিজে ভাঙার মতো মানুষ আমি না। আইজকা যখন তালা খোলা পাইসি তাই আসছি। আর এখানে আমার পোলা মাইয়া আছে। আপনি আমারে বারণ করতে পারেন না।’
বাদলের কথা শুনে আরও তেতে ওঠে ষাটোর্ধ খদিজা বেগম। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে, ‘এইটা আমার মাইয়ার বাড়ি। ওরে মাইরা ঘরের থিকা বাইর করে দিসো, সেই ঘরে তুমি ঢোকার সাহস করো ক্যামনে? আর পোলা-মাইয়ার কথা কইবা না। পোলা-মাইয়ার ভালো চিন্তা করো তুমি? তোমার মুখে এইসব মানায় না।’
বাদল বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে যায়। এরা কোন জাতের মানুষ রে বাবা! মা হয়ে মেয়েকে সামলাবে তা নয়, মেয়ের অন্যায়ে মেয়ের পক্ষে কথা বলছে, প্রশ্রয় দিচ্ছে! এজন্যই বোধহয় মোমেনা এরকম। লিজার দিকে তাকায় বাদল, সে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। বাদল বুঝতে পারছে খদিজা বেগম, মোমেনা, লিজা ওরা সবাই একটা পরিকল্পনা করেছে, সেভাবেই আচরণ করছে। বাদলের কোনো কথাই এরা শুনবে না। সে রিংকি, পিংকি আর রবিকে বলে, ‘আসো আমরা চলে যাই।’
লিজা বলে ওঠে, ‘নাহ, আমার ভাইবোন আমার কাছেই থাকব। অই ফকিন্নির ঘরে যাইব না।’
রিংকি কাতর কণ্ঠে বলে, ‘চলো না বড়পা, ছোটোমা খুব ভালো তো। খুব আদর করব।’
লিজা কঠোর কণ্ঠে বলে, ‘আমার সাথে থাকতে হইলে এইখানেই থাকবি। আমি কোথাও যাব না। আর তোর ছোটোমা একটা ডাইনি, বুঝছস?’
পিংকি বলে, ‘বাবা আমরা বড়পার কাছে থাকি?’
বাদল কিছুই বলে না। তার কথা এরা কেউ শুনবে না। উলটো সবকিছু আরও খারাপের দিকে যাবে। রবির দিকে তাকালো বাদল। অল্প বয়স হলেও যথেষ্ট চালাক সে। মনে মনে এখন হিসেব কষছে। বাবা বলেছে তাকে শহরের আবাসিক ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে। সেখান থেকেই জেএসসি, এসএসসি দিতে পারবে। এখন যদি সে বোনদের মতো বাবার কথার অবাধ্য হয় তাহলে বাবা নিশ্চিত রাগ করবেন। আর এরকম হলে তার ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হতে পারে।
রবি বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বাদলের আবেগে চোখে পানি চলে আসে আবার। সে ভাবছে ছেলে বুঝদার, বাবাকে সে বুঝতে পারে। এজন্যই সে বাবার সাথে যেতে চায়। কিন্তু তার ছোট্ট মনেও যে স্বার্থপরতার বীজ বপন করা হয়ে গেছে সেটা বাদল টেরও পেল না।
ছেলেকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে যাবে তখনই লিজার টনক নড়ল। রবি চলে যাচ্ছে! অথচ ওকে তো অনেক কিছুই বলা হয়নি, মা যেসব শিখিয়ে দিয়েছিল। এখন কী হবে? তৎক্ষণাৎ মায়ের কাছ থেকে পাওয়া বিদ্যে কাজে লাগায় সে, বাবার সামনে গিয়ে আকুতি করে বলে, ‘রবিকে নিয়ে যাবা! অনেকদিন পর দেখলাম ভাইকে। দুইদিন আমাদের সাথে থাকুক। এরপর চলে যাবে। আমি ওয়াদা করতিসি।’
বাদল দেখল রবি, পিংকি, রিংকি সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার উত্তর জানার জন্য। রবিকে নিয়ে গেলে একটু আগে চার ভাইবোন যেমন খুশিতে হইচই করছিল সেটা আর থাকবে না। বাদল ভাবতে থাকে। তারই তো সন্তান। ওরা খুশি থাকলে সেও খুশি। আর রবি তো তার বিরোধিতা করেনি, তার সাথে যেতে রাজি হয়েছে। বাদল দ্রুত চিন্তা করল। তারপর বলল, ‘তোমাদের কিছু লাগলে সলিমের দোকান থেকে আনিয়ো। আমি ওকে বলে রাখব। আর দরকার হলে আমাকে ফোন দিয়ো।’
বলেই সে বেরিয়ে গেল। পিংকি একটু বেশিই পটর পটর করে। সে মন খারাপ করে বলল, ‘বাবাও তো আমাদের সাথে থাকতে পারত।’
লিজা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘ক্যামনে থাকব। ডাইনি জাদু করসে না?’
রিংকি বলে, ‘ছোটোমা কিন্তু একটুও খারাপ না। খুব ভালো।’
লিজা ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় ওর গালে। বেচারি মন খারাপ করে ঘরের কোনায় গিয়ে বসে। বাবার সাথে চলে গেলেই ভালো হতো। ছোটোমা কত আদর করে! মন খারাপের রেশ সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়ে। লিজা ফোনে ব্যস্ত হয়ে যায়। পিংকি স্কুলের বাড়ির-কাজ নিয়ে বসে। রিংকি ঘুমিয়ে পড়ে।
রবি অবশ্য নিজের মতোই আছে। মেয়েদের মতো এত ক্যাচাল করতে তার ভালো লাগে না। তার একটা লক্ষ্য আছে। অনেক বড় অফিসার হবে সে। এই গ্রামে আর থাকবে না। তার বন্ধু আবীরের মামা থাকে শহরে। প্রাইভেট কারে চেপে ওরা গ্রামে আসে মাঝে মাঝে। কী সুন্দর তাদের বেশভুষা! মোবাইলের মতো কিন্তু বড় ধরনের একটা জিনিস নিয়ে ঘোরে, নাম নাকি ট্যাব। কথা বলে বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে। নানারকম খাবারের নাম বলে, যেগুলো দেখা তো দূরের কথা নামই কখনো শুনেনি আগে। রবি জানে, ওদের মতো হতে গেলে অনেক টাকার দরকার। কিন্তু গ্রামে লেখাপড়া করলে তার স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা কম।
আবীরের মামাতো ভাই শহরের ক্যাডেট স্কুলে পড়ে। রবি তার বাবাকে অনেক আবদার করে বলেছে ওরকম একটা ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে। বাবা রাজি হয়েছে। এখন শহরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে সুবোধ বালক হয়ে থাকতে হবে।
সেই থেকে বাদলেরও মন খারাপ। মন খারাপ কোহিনূরেরও। তার ছোট্ট কুঁড়েঘরটা কোলাহল মুখর ছিল এই কয়দিন। এখন আবার নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। যদিও বাদল আছে, কিন্তু তার সামনে খুব কমই যায় কোহিনূর। তাদের মাঝে এখনো একটা পর্দা রয়ে গেছে। কোহিনূর চায় সেই পর্দা সরে যাক, আবার ভয়ও পায়। কী হবে, কী হবে এমন একটা ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সারাক্ষণ।
বাদল নিজের বিছানায় শুয়ে আছে। কোহিনূর তাকে খেতে ডাকে। চলে যাওয়ার সময় বাদলের চোখ চলে যায় কোহিনূরের বাঁ হাতের পিঠে। বেশ বড়ো একটা ফোস্কা পড়েছে। সাথে সাথে বাদল উঠে গিয়ে কোহিনূরের হাত ধরে, জিজ্ঞেস করে, ‘কী হইসে এইখানে?’
কোহিনূর লজ্জা ও ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। প্রায় ফিসফিস করে বলে, ‘পুইড়া গ্যাছি।’
বাদল হাত ধরে রেখেই আফসোস করতে থাকে, ‘আহারে, আহা! একটু দেইখা শুইনা কাজ করতে পারো না? বেশিই পুড়সে। আসো মলম লাগায় দিই।’
কোহিনূরকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসায়। তারপর নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে বার্নিং ক্রিম বের করে কোহিনূরের হাতে হালকাভাবে লাগাতে থাকে। কোহিনূর কেঁপে ওঠে। বাদল তাকিয়ে দেখে, চোখ বন্ধ করে রেখেছে সে, দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরা। নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে, নোলকটা কাঁপছে তিরতির করে। জ্বলুনির কারণে? নাকি অন্যকিছু? যে হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিল সেই হাতেই হঠাৎ কোহিনূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে বাদল। কোহিনূর অনড়। যেন পাথর হয়ে গেছে!
বাধা না পেয়ে বাদল আরও এগিয়ে যায়। রাত নয়টা, বাইরে ঝিঁঝি পোকা একঘেয়ে সুরে ডেকে যাচ্ছে। সেটা-ই যেন কোনো আবেদনময় গান হয়ে ধরা দিয়েছে বাদলের কানে। কোহিনূরের ঘামের গন্ধ নেশা ধরিয়ে দেয়। বার্নিং ক্রিম মাটিতে অবহেলায় পড়ে থাকে। বাদলের দুহাত হাত ব্যস্ত হয়ে গেছে। কোহিনূর নিজেকে এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়। এই ছোট্ট কুঁড়েঘরে আজ দুই বছর পর বাদল আর কোহিনূরের বাসর রচিত হতে যাচ্ছে।
বাদল কোহিনূরের মাঝে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ কোহিনূর তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারপর দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করে। বাদল অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কী হলো এটা! তারপর নিজের ভুল বুঝতে পারে। তার জন্য এটা নতুন নয়, কিন্তু কোহিনূরের তো আজই প্রথম। বাদলের নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হয়। সে অপরাধীর সুরে বলে, ‘কোহিনূর তুমি কান্দিয়ো না। আমার খুব খারাপ লাগতেসে। আমি আসলে বুঝতেই পারি নাই ক্যামনে কী হই গ্যাছে। আমার নিজের ওপর কন্ট্রোল ছিল না। আমাদের মধ্যে এইসব আসলে এইভাবে শুরু হওয়া উচিত হয় নাই। আমারে মাফ কইরা দাও।’
তখনই কোহিনূর বাদলের পায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আপনি কোনো দোষ করেন নাই। মাফ তো আমার চাইতে হইব।’
বাদল মাথা নেড়ে বলে, ‘না না…’
কোহিনূর তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে, ‘আমি আপনারে কখনো বউয়ের সুখ দিতে পারব না। সেই ক্ষমতা আমার নাই।’
অকস্মাৎ এমন কথা শুনে বাকহীন হয়ে যায় বাদল। কী বলছে এসব কোহিনূর। কোহিনূর কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে যায়, ‘আমি কুনোদিন মা হইতে পারব না। আমার আইজ পর্যন্ত মাসিক হয় নাই। ডাক্তার আপা বলসে আমার জরায়ু নাই।’
বাদল একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে। অনেক পড়ালেখা করলেও মেয়েদের এসব ব্যাপার নিয়ে তার তেমন জ্ঞান নেই। সে জানে প্রতিমাসে সব মেয়েদের মাসিকচক্র হয়। কারও কারও যে হতে পারে না, এটা তার জানা ছিল না। আর এর কারণে কী কী সমস্যা হয় তাও সে জানে না।
কোহিনূর এলোচুলে, অবিন্যস্ত কাপড়ে এখনো বিছানায় বসে আছে। হেঁচকি তুলে কাঁদছে এখনো। বাদল বুঝতে পারে না কী করবে, তাকে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত? কিন্তু কী বলে সান্ত্বনা দেবে?
ঘর থেকে বের হয়ে আসে বাদল। পা ছড়িয়ে উঠোনে বসে আকাশের দিকে তাকায়। ফিসফিস করে বলে, ‘আমি কি খুব বেশি গুনাহগার? আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও আল্লাহ, জীবনটা গুছাই দাও। আমি আর পারতেসি না।’
(চলবে)
[কীওয়ার্ডস:
অবিচার [ বারো পর্ব ] | সালসাবিলা নকি
অবিচার [ বারো পর্ব ] : সালসাবিলা নকি
অবিচার [ বারো পর্ব ] – সালসাবিলা নকি
ছোটোগল্প | অবিচার [ বারো পর্ব ]
সালসাবিলা নকির ছোটোগল্প | অবিচার [ বারো পর্ব ]
ছোটোগল্প , সমকালীন গল্প , জীবনধর্মী গল্প, নন-ফিকশন , গল্পীয়ান]