একা (উপন্যাস) | মৌলী আখন্দ | রিভিউ: সালসাবিলা নকি | গল্পীয়ান | Golpiyan

একুশে বইমেলা ২০২০ এ আসছে মৌলী আখন্দের উপন্যাস ‘একা’!

১৯৭১ সাল অর্থাৎ আজ থেকে ৪৯ বছর আগে মেয়েদের জীবন কেমন ছিল? আমার নানির মুখে শোনা, তার বিয়েটা ছিল এমন, ‘উঠ ছুড়ি তোর বিয়ে হবে।’ তের, চৌদ্দ, পনেরো বছরের মেয়েদের আমরা এখন ‘বাচ্চা একটা মেয়ে’ বলি। অথচ সেই সময়ে এই বাচ্চা মেয়েরা একটা দুটো বাচ্চার মা হয়ে যেত। কী কঠিন সময় ছিল তাদের! সেই অল্প বয়সে বিয়ে, স্বামী, সংসার আর বাচ্চা সামলানো! কেমন ছিল তাদের অনাধুনিক জীবনযাপন? জানা যাবে আমাদের নানি-দাদির কাছ থেকে। আর জানা যাবে- একা উপন্যাসটি থেকে।

‘একা’ একটি সামাজিক জীবনধর্মী উপন্যাস। কিন্তু এতে থ্রিল, রোম্যান্স সবই সমানুপাতে আছে। আবার অনেকে একে নারীবাদী লেখাও বলতে পারেন। তাই একে আলাদা করে কোন জনরার আখ্যা দেয়া মুশকিল।

কী আছে এই ‘একা’ উপন্যাসে:

তিন প্রজন্মের নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনায় এগিয়েছে উপন্যাসটির কাহিনি। জেনারেশন গ্যাপ এখানে একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় থাকলেও তিন প্রজন্মের নারীর মধ্যেই একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেটা হলো তাদের দুঃখগুলো, তাদের কষ্টগুলো, তাদের আনন্দ, অনুভূতি সব একই। বাস্তব জীবনেও তাই। সেই আদি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত মেয়েরা তাদের ‘মেয়ে হয়ে জন্মানোর’ কারণে পাওয়া কষ্ট, প্রবঞ্চনা, অবহেলা সব‌কিছু নিয়েই ‘ একা ‘।

কাহিনি সংক্ষেপ:

তেরো বছর বয়সে বিয়ে হয় রওশনের। স্বামী কে, বিয়ে ব্যাপারটা আসলে কী, সংসারের দায়িত্ব এসব বিষয় বুঝতে পারার আগেই একে একে ছয় সন্তানের জননী হয় সে। স্বামী মারা যায় তাকে তরুণী অবস্থায় রেখে। একা হাতে সংসার সামলানো, সন্তান লালন-পালন সব করেছে রওশন।

তার পাঁচটি মেয়ে, প্রত্যেকেই জীবন পথে ঝড়-ঝঞ্ঝার শিকার হয়েছে। অল্প বয়সে করা ভুল তাদের চলার পথকে কঠিন করেছে ঠিকই, কিন্তু থামাতে পারেনি তাদের পথচলা। জীবনের সব প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ করে এগিয়ে গেছে তারা।

কিন্তু রওশন বা তার মেয়ে মুক্তি, তৃপ্তি, জরী এদের মতো মনোবল ছিল না রূপকথার। ছিল না তার মায়ের মতো মানসিক শক্তি। তাই তো সে চুপিচুপি হারিয়ে গেছে, নিজেকে রূপকথার রাজ্যের অধিবাসিনী করেছে। অন্যদিকে তারই বোন অর্পিতা নিজেকে শেষ করতে চেয়েও পারেনি। ফিরে এসেছে জয়ী হয়ে। নিজেকে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে দেয়নি সে।

গল্পগুলো শুধু রওশনের, মুক্তির, তৃপ্তির, জরীর, রূপকথার, কিংবা অর্পিতার নয়। গল্পগুলো আমার, তোমার কিংবা আপনার। আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা মেয়ের। গল্পগুলো আমাদের একাকিত্বের।

পাঠ-প্রতিক্রিয়া:

উপন্যাসটি অনলাইনে বিশেষ করে ‘পেন্সিলের’ দেয়ালে বেশ জনপ্রিয় ছিল। এটা পড়ে কাঁদেননি এমন নারী বা পুরুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু পাঠককে কাঁদানো লেখিকার উদ্দেশ্য ছিল না। লেখিকা চেয়েছেন সবাই সচেতন হোক। অল্প বয়সে করা ভুলের জন্য যেন কেউ নিজের জীবন বিপন্ন না করে। কেউ যেন ভেঙে না পড়ে।

জীবনে অনেক সমস্যা, যন্ত্রণা, বিপদ আসতে পারে। শক্ত হাতে কীভাবে সবকিছু মোকাবেলা করা যায় সেই মনোবল পাওয়া যাবে এই উপন্যাসের চরিত্রগুলোর কাছ থেকে।

সমাজের দীর্ঘদিনের ভ্রান্ত ধারণার বলি হচ্ছে অনেক প্রসূতি মা। সেই ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতে হবে আমাদেরই। তার আগে জানতে হবে। আর সেসবই জানানোর চেষ্টা করেছেন লেখিকা।

প্রত্যেকটা চরিত্রই যেন এখানে বাস্তব। যেন সত্যিই এসব ঘটেছে আমাদের আপনজনদের সাথে, আমাদের নিজেদের সাথে। লেখা ছিল একেবারেই সাবলীল। আমি কখনও শিউরে উঠেছি, কখনও কান্নায় ভেঙে পড়েছি, কখনও দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়েছি এই ভেবে, অনেকটা পথ বাকি এখনও হেঁটে যাওয়ার।

আমি একজন সামান্য পাঠক। সাহিত্যবোদ্ধা নই‌। তাই এই উপন্যাসটি সাহিত্যমানে কত নাম্বার পাবে সেটা বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। তবে এই সমাজের একজন‌ হয়ে বলতে চাই, উপন্যাসটি সবার পড়া উচিত।

অন্য সময় বলি, পাঠকের ভালো লাগবে, পড়ে তৃপ্তি পাবেন। এখন বলব, বইটি পড়ে জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন আপনার কাছের মানুষটি অবহেলিত হচ্ছে কিনা, মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছে কিনা। লালন বলেছেন, ‘সময় গেলে সাধন হবে না।’ তাই সময় থাকতে কাছের মানুষদের আগলে রাখতে ‘একা’ পড়া খুব প্রয়োজন।

এক নজরে: একা

ধরন: সামাজিক সচেতনতামূলক উপন্যাস

লেখিকা: আমাদের সবার প্রিয়, ডা: মৌলী আখন্দ আপু

প্রকাশনা: ভূমিপ্রকাশ

চমৎকার প্রচ্ছদটি করেছেন: আবুল ফাতাহ্ 

মলাট মূল্য: ৩০০৳

প্রি-অর্ডার মূল্য: ১৮০৳  (৪০% ছাড়)

অর্ডার করতে পারেন: ‘বিবিধ‘ , ‘Bibliophile‘ , ‘Bookstreet‘ ও রকমারিতে।

আরও পড়ুন: নিভৃত ভালোবাসা

লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “একুশে বইমেলা ২০২০ এ আসছে মৌলী আখন্দের উপন্যাস ‘একা’!”

মন্তব্য করুন: