পৌষালি প্রেম | ইসরাত জাহান জান্নাত
অনিরুদ্ধ রায়,
আপনার হয়তো আমাকে তেমন স্মরণে নেই!
এই বিশটা বছর পেরোলো, কত পৌষি আকাশ ছলছল করে রোদ্দুর পেল।
এত বছর পরে কার বা মনে থাকে?
অথচ, দেখেন আমি কিন্তু বেশ মনে রেখেছি।
আপনাকে নিয়ম করে চিঠিপত্র লিখছি; ওসব চিঠিপত্র পৌঁছায়-টৌছায় না জানি!
তবুও আমি লিখি, আমার ষোলোকলা পূর্ণ করা এই চিঠিপত্রই তো আছে এক জীবনে।
অনিরুদ্ধ রায়, আপনার জন্য একটা পাঞ্জাবি বানিয়েছিলুম।
কয়টা চালকুমড়োর বড়িও শুকিয়েছি!
ঘাসের ওপর বসে সে-বার বলেছিলেন, ‘তোমার বড়ি রান্নাটা বেশ! খাইয়ো আবার!’
আমি কিন্তু ভুলিনি অনি! হা হা হা!
এসব ভোলা এত সহজ বলেন? অনিরুদ্ধ রায়!
দশমীতে আমি একটা লাল শাড়ি পরেছিলুম,
ভীষণ করে আলতা দিয়েছিলুম,
একটুখানি সিঁদুর দিয়েছিলুম;
পাড়ার লোক বলল, ‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি!’
আচ্ছা, আপনিই বলুন আমারও তো শখ হয়।
তবুও কেন লোকে বলে, ‘মুসলমানের মাইয়া, জাহান্নাম…জাহান্নাম!’
ছলাৎ ছলাৎ যেই বুকের পাঁজরটা আমার প্লাবিত হয়,
যেই রাতগুলো আমাকে বিষণ্ণতায় গিলে খায়।
ওসব রাতে কই থাকেন আপনি?
অনিরুদ্ধ রায়, কই থাকেন?
আপনার মনে আছে?
সেদিন মুষলধারার বৃষ্টির ক্রন্দন,
আমার বৃষ্টি ভালো লাগে না, আপনার লাগে,
কী এক তুমুল তর্ক-বিতর্ক!
সেদিনও কি জানতাম?
আপনিই আমার চোখের সব বৃষ্টির কারণ-অকারণ!
একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আমাকে ছুঁয়ে দিব্যি খেয়েছিলেন,
‘তোমারে খুব ভালোবাসি তরু। আমি একটা বৃত্তের কেন্দ্র। আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আছে হাজারটা চোখ। তুমি একদম বাইরের চোখ তরু। আমি ওই হাজারটা চোখ জলাঞ্জলি দেবো, শুধু তুমি একবার রাজি হও!’
অনিরুদ্ধ রায়, আপনি সত্যিই জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন এক ভাদ্র মাসে, পৌষালি প্রেমের জলাঞ্জলি!
ওইদিন রাতে বাড়ি ফিরে আমি খুব কেঁদেছিলুম।
তখনো আমার কানের কাছে আপনার গলার স্বর-
‘তোমাকে ভালোবাসি তরু! ভালোবাসি।’
এরপর কতশত পৌষ-ভাদ্রের মাখামাখি!
আপনারও আর প্রেম হলো না, বলেছিল- ননাই দাদা।
অথচ, আমার শরীরে তখনো আপনার প্রতীক্ষা।
আপনি ফিরেছিলেন বটে, বলেছিলেন,
‘তরু, আমাকে মাফ করে দাও। আমি আজন্মকাল তোমার দাস হয়ে রবো। তবে যেটা সমাজের অন্যায়, ওটা তো আর ন্যায় হবে না। আমি চললুম। হয়তো পরজন্মে আমরা এক হব।’
অনিরুদ্ধ রায়, আপনি সত্যিই সেদিন পাড়ি জমিয়েছিলেন অন্যগ্রহে।
অথচ, আমায় দিয়ে গেলেন এক ঝাঁক পোয়াতি অসুখ।
‘অনি’ নামের ভীষণ অসুখ!
খুব ভালো থাকুন অন্য গ্রহে, অন্য আবেশে;
আমার প্রিয়— অনিরুদ্ধ রায়!
পৌষালি প্রেম | © ইসরাত জাহান জান্নাত
(২৪/১০/২০)
পটিয়া, চট্টগ্রাম।
আরও পড়ুন: আলেয়া [প্রথম পর্ব] | ইসরাত জাহান জান্নাত