‘ও ভাইজান, আপনের বোন গেরামে অশান্তিতে আছে আর আপনি এইখানে শহরে ফ্যানের নিচে বইসা মহানন্দে টিভি দেখতেছেন? বইনের জন্যে কি একটুও পরান জ্বলে না?’
ভরদুপুরের কাঠফাটা রোদে এক তলা বাসাটা আগুনের চুল্লির মতো গরম হয়ে থাকে। তাই এই সময় মফিজুর রহমান বাসার সদর দরজা খোলা রাখেন। সামনে চিকন করিডোরের মতো। সেই করিডোরের শেষপ্রান্তে লোহার গেইট। মোটে তিনটে বাসা আছে এই বিল্ডিং এ। তিনটেই পাশাপাশি। দেখতে অনেকটা কলোনির মতো লাগে। ওপরে খোলা ছাদ থাকায় উন্নত মানের কলোনি বলা যায় এটাকে। ছাদের গরম সরাসরি বাসায় অনুভব হয়। মফিজুর রহমানের বাসায় কেউ আসে না তেমন। তাই নির্বিঘ্নে বাসার দরজা খোলা রাখতে পারেন তিনি। মনে করেন এতে বাসার গরম বেরিয়ে যাবে।
দরজা খোলা রাখার সুবাদে ঝড়ের বেগেই সোজা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে পেরেছেন মোমেনা বেগম। মোমেনা বেগম মফিজুর রহমানের আদরের বোন। আদরের বোন বলার কারণ হলো, তার সব দোষ তিনি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন না, বরং তিনি বোনের কোনো দোষই দেখতে পান না। পারলে তিনি প্রশ্রয় দেন। কিন্তু এখন এভাবে আসাতে তিনি কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। কারণ মোমেনা বেগমের হাতে কাপড়ের ব্যাগটা একটু বড়ই। কতদিন থাকার পরিকল্পনা করেছে কে জানে।
এ মাসে তাহলে একটু বেশিই খরচ হবে। নাহ, তার মতো বুদ্ধিমান মানুষের খরচ বেশি হওয়ার উপায়ই নেই। প্রতিমাসে বাসায় খরচের জন্য যত টাকা দেন এ মাসেও তাই দেবেন। ছেলেটা টিউশনি করে। বাড়তি টাকা লাগলে ওরাই ব্যবস্থা করে নেবে।
মোমেনা বেগম এরই মধ্যে ভাইয়ের মুখোমুখি বসে পড়েছেন। মফিজুর রহমান জানতে চাইলেন, ‘কী হইল এভাবে না বইলা চইলা আসলি? এখন তো সবার হাতে হাতে মুবাইল ফোন আছে। একটা ফোন করতে পারতি না?’
ফোনের কথা বলার সাথে সাথেই ঘর কাঁপিয়ে রিং টোন বেজে ওঠল। মোমেনা বেগম তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল নিয়ে কে কল করেছে দেখলেন। তারপর রিসিভ না করেই কেটে দেন। মফিজ চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছেন। মোমেনা কৈফিয়তের ভঙ্গিতে বললেন, ‘গত মাসে চাল, ডাল আর সয়াবিন তেল বিক্রি কইরা অই ট্যাকা দিয়া মোবাইল কিনসি!’
মফিজ এবার রাগতস্বরে বললেন, ‘তাইলে নিজের মোবাইল থেইকা ফোন দিলি না ক্যান?’ মোমেনা এবার নাকি কান্না শুরু করে দিলো। ‘ও ভাইজান গো, আমি যে কী কষ্টের মইধ্যে আছি… ফোন কইরা আসার মতো মাথা তো ঠিক নাই।’
আছিয়া খাতুন (মফিজুর রহমানের স্ত্রী) ননদের দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ধরো শরবতটা খাইয়া লও আগে। এই গরমের মইধ্যে আসছো। একটু সকাল সকাল বা বিকাল কইরা আসতে পারতা…!’
কথাটা শেষ হতে না হতেই মফিজ চেয়ার ছেড়ে ঘুষি মেরে তেড়ে গেলেন আছিয়া বেগমের দিকে, ‘আমার বইন কোন সময় আসবো না আসবো তা তুই বলার কে রে হারামজাদি?”
‘আম্মু…’ মেয়ে শৈলীর ডাকে থমকে যান মফিজ। আছিয়া খাতুনকে ঘুষিটা আর মারা হয় না। শৈলী আছিয়া বেগমের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় যাতে মফিজ হাত তুলতে না পারে। তারপর বলে, ‘আমার মাথা ব্যথা করতেসে। একটু চা দিবা?’ আছিয়া বেগম দ্রুতপায়ে রান্না ঘরে চলে যান। শৈলীও নিজের রুমে যায়।
মোমেনা বেগম আফসোস করতে থাকেন। শৈলীর জন্য বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সব সময় কি আর এমন দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়? ওদিকে মফিজ রাগে জ্বলতে থাকেন। কার উপর রাগ, কেন রাগ, তিনি নিজেই জানেন না। শুধু তার হাতটা নিশপিশ করতে থাকে। সুযোগ বুঝে আছিয়াকে কয়েকটা দিতেই হবে। নাহলে মনের জ্বলুনি আর হাতের নিশপিশানি বন্ধ হবে না তার।
(চলবে)
[কীওয়ার্ডস:
অবিচার [ প্রথম পর্ব ] | সালসাবিলা নকি
অবিচার [ প্রথম পর্ব ] : সালসাবিলা নকি
অবিচার [ প্রথম পর্ব ] – সালসাবিলা নকি
ছোটোগল্প | অবিচার [প্রথম পর্ব]
সালসাবিলা নকির ছোটোগল্প | অবিচার [প্রথম পর্ব]
সালসাবিলা নকির ছোটোগল্প : অবিচার [প্রথম পর্ব]
সালসাবিলা নকির ছোটোগল্প – অবিচার [প্রথম পর্ব]
ছোটোগল্প , সমকালীন গল্প , জীবনধর্মী গল্প, নন-ফিকশন , গল্পীয়ান]
Pingback: অবিচার [পঞ্চম পর্ব] | সালসাবিলা নকির ধারাবাহিক ছোটগল্প | গল্পীয়ান
Pingback: অবিচার [চতুর্থ পর্ব] | সালসাবিলা নকির ধারাবাহিক ছোটগল্প | গল্পীয়ান | Golpiyan
Pingback: অবিচার [তৃতীয় পর্ব] | সালসাবিলা নকির ধারাবাহিক ছোটগল্প | গল্পীয়ান
Pingback: অবিচার [দ্বিতীয় পর্ব] | সালসাবিলা নকির ধারাবাহিক ছোটগল্প | গল্পীয়ান